বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post
পানি সংকট 

ভেড়ামারা জিকে পাম্প হাউজ বন্ধে হুমকিতে কৃষি আবাদ 

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া  

ভেড়ামারা জিকে পাম্প হাউজ বন্ধে হুমকিতে কৃষি আবাদ 

বোরো মৌসুম চালুর এক মাস পার হলেও এখনো চালু করতে পারেনি দেশের সর্বোবৃহৎ গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। গত ১৫ জানুয়ারি সেচ পাম্প চালু হওয়ার কথা থাকলেও সময়মত ওই সেচ পাম্প চালু করতে না পারায় চাষীরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কারন ভেড়ামারা জিকে ক্যানেলের উপর পুরাতন ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রিজ  নির্মাণ করতে বিলম্ব হওয়ায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জিকে কতৃপক্ষ জানিয়েছে। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুষ্টিয়া এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ করছে। ভেড়ামারা পদ্মা নদীর ইনটেক চ্যানেলের মুখে চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দেশের সর্ববৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সেচ পাম্প ভরা মৌসুমে বন্ধ হয়ে গেছে। সেচ পাম্প ১ জানুয়ারি চালু করার কথা ছিলো। কিন্তু জিকে খালে পানি না থাকায় খাঁ খাঁ করছে খালটি। ফলে ৪ জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি কৃষি আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। 

সেচ পাম্প চালুর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পদ্মায় পানি নেই। পদ্মা থেকে জিকের ইনটেক চ্যানেল দিয়ে পানি সেচ পাম্পের মুখে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে জিকে পাম্পের কর্তৃপক্ষ ভরা মৌসুমে পানি সরবরাহ করতে পারছে না। পানির অভাবে পাম্প বন্ধ। সেচ পাম্প চালু করতে বহুগুণে ব্যয় বাড়ছে। সেই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মরুকরণের দিকে যাচ্ছে এ অঞ্চল। 

পদ্মাতে কাঙ্খিত পানি না থাকায় বোরো মৌসুমে এবারও সঠিক সময় পানি দিতে পারছে না গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। জিকে খালে দ্রুত পানি সরবরাহের দাবি কৃষকসহ সচেতন মহলের।

উল্লেখ্য, ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের একটি চ্যানেল করে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে পাম্প করে তুলে ক্যানেলের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরায় কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হয়। 

ভেড়ামারা পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জিকে প্রকল্পের প্রধান সেচ পাম্পের সংস্কার কাজ চলছে। জিকে প্রকল্পের প্রধান সরবরাহ খালের তিন নং ব্রিজের কাজ করছে সড়ক বিভাগ। এ কারণে মাটি ফেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে জিকের প্রধান খালটি। সড়ক বিভাগের কাজ শেষের দিকে, আগামী ৩০ জানুয়ারি খাল উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও তা হয়নি। 

যদি খাল উন্মুক্তও হয় পদ্মায় পানি প্রবাহ এখন অনেক কম যার ফলে প্রকল্পের চ্যানেলে এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে ৪ দশমিক ৫ আরএল মিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এখন গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৬ থেকে ৪ দশমিক ৭ আরএল মিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে। এতো কম পানি দিয়ে পাম্প চালানো সম্ভব নয়। এজন্য গত সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর জোনে করণীয় ঠিক করতে প্রকৌশলীরা বৈঠকে বসেন তবে বৈঠকে কি আরোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কোন তথ্য জানান নি।
 
জিকে প্রকল্প একসময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের কার্যক্রম সংকুচিত হতে হতে এখন ৮ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে। পাম্প নষ্ট ও খালগুলো দখল-দূষণ হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ছে এ সেচ প্রকল্প। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, ৪ জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু এই প্রকল্পের। এর স্বর্ণযুগে ১৯৮৩ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়। বর্তমানে এর আওতায় ৯৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব। 

কিন্তু খালগুলোর বড় অংশ দখলে থাকা ও প্রকল্পের তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটিই নষ্ট হওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে। রাশিদুর রহমান আরো জানান, চার জেলার ১৩টি উপজেলায় এ কার্যক্রম বিস্তৃত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পানি সরবরাহের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। কিন্তু পদ্মায় পানির স্তর অনেক কম থাকায় পাম্পে প্রয়োজনীয় পানি উঠছে না।

টিএইচ